হোম আমাদের সম্পর্কে জেলা বিচার বিভাগের ইতিহাস
জেলা বিচার বিভাগ নীলফামারীর ইতিহাস
নীলফামারী বাংলাদেশের উওরের একটি প্রাচীন জনপদ। ঐতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শন ও প্রাচীন গ্রন্থাদি থেকে এ অঞ্চলে আদিম জনবসতির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব নবম শতকে খননকৃত বিরাট রাজার দীঘি অপভ্রংশে বিন্নাদীঘি নীলফামারীর প্রাচীন ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এছাড়াও বিলুপ্তপ্রায় ধর্মপালের গড়, হরিশচন্দ্রের পাঠ, ভীমের মায়ের চুলা এ জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন। ধারণা করা হয়, স্থানীয় কৃষকদের মুখে ‘নীল খামার’ রূপান্তরিত হয় ‘নীল খামারী’তে। আর এই নীলখামারীর অপভ্রংশ হিসেবে উদ্ভব হয় নীলফামারী নামের।
নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতি অত্যন্ত পুরনো একটি সমিতি। ১৮৯৪ সালের ৬ এপ্রিল স্থানীয় আইনজীবীগণের একটি সভায় নীলফামারী আইনজীবী সমিতি বা বার সমিতির গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রীযুক্ত বাবু কৈলাশ চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় এবং সভায় উপস্থিত ছিলেন বাবু কেদার নাথ চট্রোপাধ্যায়, বরদা শঙ্কর চক্রবর্তী, গোপাল চন্দ্র চট্রোপাধ্যায়, জানকী নাথ বিশ্বাস এবং ব্রজ কুমার ভট্টাচার্য। কালের বিবর্তনে নীলফামারী মহকুমা জেলায় রুপান্তরিত হয়েছে এবং মহকুমা আইনজীবী সমিতি উন্নতি হয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি রুপে। নীলফামারী জেলায় প্রথম মুসলিম আইনজীবী ছিলেন মৌলভী কছির উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি ১৯২৬ সালে বঙ্গীয় আইন সভায় সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মৌলভী কছির উদ্দিন আহম্মেদের আদি নিবাস ছিল জলঢাকা থানাধীন বালাগ্রামে। ১৯২৩ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে একে একে নাছির উদ্দিন আহম্মেদ, আব্দুল গফুর, আজিজুল ইসলাম, হিম্মত আলী, ছাদের হোসেন, নছর উদ্দিন সরকার, সাহার উদ্দিন আহম্মদ, মমিন উদ্দিন, নছির উদ্দিন আহম্মদ, নছর আলী, ময়েন উদ্দিন আহমেদ, দবির উদ্দিন আহম্মদ, দরিজ উদ্দিন আহম্মদ, মতিয়ার রহমান চৌধুরী প্রমূখ মুসলিম আইনজীবীগণ আইন ব্যবসা শুরু করেন। স্থানীয় তফসিল হিন্দু সম্প্রদায় ভুক্তদের মধ্যে ভারত বিভাগের পূর্বে মাত্র ২ জন আইনজীবী নীলফামারীতে ছিলেন। এরা হলেন দেবেন্দ্র নাথ সরকার ও খগেন্দ্র নাথ সরকার।
আইনজীবী সমিতিটি প্রতিষ্ঠার পর হতে নীলফামারীতে নানা কল্যানকর কাজ করেছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ৫২ এর ভাষা আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে আইনজীবী সমিতির ভুমিকা অগ্রগণ্য। ১৮৯৯ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক আইনজীবী সম্মেলনে যোগদানের জন্য স্থানীয় আইনজীবী সমিতি থেকে ৪ জন প্রতিনিধি প্রেরণ করা হয়েছিল। ভারত বিভাগের পূর্বে সমিতির সদস্যগন ফৌজদারি আদালতে যেতেন না কিংবা ফৌজদারী মামলা পরিচালনা করতেন না। তাদের কার্যক্রম কেবলমাত্র দেওয়ানি আদালতের মধ্যে সীমাবন্ধ ছিল। ১৯০৩ সালে ১লা জানুয়ারি ভারত সম্রাটের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষ্যে নীলফামারী আইনজীবী সমিতি সজ্জিত করা হয়। ১৯২০ সালে স্যার আশুতোষ মুখার্জি কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি পদে পদোন্নতি হলে নীলফামারী আইনজীবী সমিতি অভিনন্দন জ্ঞাপন করে। ১৯৩৪ সালে মে মাসে দার্জিলিং শহরে বাংলার গভর্নরের এবং ১৯৩৬ সালে ভারত সম্রাটের জীবননাশের চেষ্টা করা হলে আইনজীবী সমিতি নিন্দা প্রস্তাব গ্রহন করে। ১৯৪২-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সময়ে খাদ্য দ্রব্য, লবণ, কেরোসিন ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ হিসাবে নীলফামারী আইনজীবী সমিতি সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য যারা শহিদ হয়েছিলেন তাদের জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারী আইনজীবী সমিতি শোক প্রস্তাব করে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে আইনজীবী সমিতি প্রতিবাদ জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহন করে। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষদের জন্য আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ত্রাণকার্য পরিচালনা করা হয়। একশত বছরের সরব সাক্ষী জেলা আইনজীবী সমিতি তার শত বার্ষিকী পূর্তী অনুষ্ঠান পালন করেছে ১৯৯৪ সালের ১৫ এপ্রিল। নীলফামারী বারের ইতিহাসে সবচেয়ে জাকজমকপূর্ণ সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি মোস্তাফা কামাল এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আপীল বিভাগের বিচারপতি মোঃ ইসমাইল উদ্দিন সরকার এবং হাইকোট বিভাগের বিচারপতি মোঃ আনসার আলী ও মোঃ আব্দুল মান্নান। নীলফামারী বিচার বিভাগের যাত্রার শুরু থেকেই নীলফামারী বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান।
কালের পরিক্রমায় নীলফামারী মহকুমা জেলায় পরিণত হলে ১৯৮৪ সালে নীলফামারী জেলা জজ আদালতের কার্যক্রম চালু হয়। প্রথম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শিকদার মোঃ মকবুল হক। বর্তমানে মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ জনাব মোঃ মাহমুদুল করিম ১৭ তম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর প্রথম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জনাব মোঃ মনসুর আলম। বর্তমানে জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম ৬ষ্ঠ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে নীলফামারী আইনজীবী সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ২২৪ জন। নীলফামারী বিচার বিভাগ বিচারিক সেবা জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।